Saturday, November 21, 2015

মানি ম্যানেজমেন্ট (পজিশন সাইজিং)

ডায়নামিক মানি ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে পূর্বে একটি পোষ্ট করেছিলাম যার লিংকঃ
https://www.facebook.com/groups/tabangla/permalink/831863713595038/

এর পর আর মানি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে লেখা হয়নি। আজ শুরু করছি মানিম্যানেজমেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পজিশন সাইজিং সম্পর্কে।



ব্যবসা মানেই ঝুঁকিআর শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ? সেখানে তো ঝুঁকি আরো বেশিতাই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়আমার সব মূলধন যদি এক শেয়ারে খাটাই তাহলে আমি খুব বেশি লাভবান হতে পারি, আবার খুব বেশি লোকসানের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারিঝুঁকি কমানোর একটা কৌশল হল পজিশন সাইজিংঅর্থা আপনি যে সব শেয়ারে টাকা খাটাবেন (পজিশন নেবেন)  তার আকার (সাইজ) নির্ধারণ করে দেওয়াতাহলে আমরা বলতে পারি শেয়ার ক্রয় বিক্রয়ের আকার নির্ধারণের পদ্ধতিই হচ্ছে পজিশন সাইজিংপজিশন সাইজিং এর সারকথা হল "সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখতে নেই"সহজ উপায় হল আপনার মূলধনকে কয়েকটি সমান ভাগে ভাগ করে ঝুঁকিকে ভাগ করে দেওয়াযেমন আপনার মূলধন যদি ১০ লক্ষ টাকা হয় তাহলে তাকে (৪* ২.৫ লাখ) বা (৫* ২ লাখ) অথবা যুক্তিসঙ্গত ভাগে ভাগ করে দেওয়াএভাবে মূলধণ ভাগ করে দেওয়ার অর্থ হল আমরা আমাদের ঝুঁকিকে ভাগ করে দিলাম, কোন একটি শেয়ারের দাম হঠা অনেক বেশি পড়ে গেলে তা যেন পুরো মূলধনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে 

এখন প্রশ্ন হবে পারে এই যে ৪/৫ ভাগে ভাগ করলাম এই ৪/৫ ভাগের প্রত্যেকটি শেয়ার কি একই খাতের মধ্য থেকে নির্বাচন করব?
-না, ৪/৫ টি শেয়ার হবে ভিন্ন ভিন্ন খাত থেকে।

 শেয়ার কেনার সময় আমাদের একটা বিষয় মাথায় রাখতে হয়, তা হলঃ এই শেয়ারের দাম কত পর্যন্ত কমতে পারেসেভাবেই আমরা আমাদের ঝুঁকি মিনিমাইজ করে থাকিধরে নিচ্ছি, আমার ১০ লাখ টাকার মধ্যে আমি ৫ টি সেক্টরে ২ লাখ টাকা করে বিনিয়োগ করবোএকটি সেক্টরে (যেমন টেক্সটাইল খাতে) আমি ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবো এবং এই ২ লাখ টাকা আমি ১ টি শেয়ারে বিনিয়োগ করবোধরে নিচ্ছি "X নামক শেয়ারটি " এখন ক্রয়যোগ্য অবস্থায় আছেসর্বশেষ (১৯/১১/২০১৫) ক্লোজ প্রাইস ১১.১ টাকা এবং আমি ৪টি পৃথক পজিশনে ( অর্থা ৪ বারে ) এই শেয়ার ক্রয় করবো। তাহলে আমার প্রত্যেক পজিশনের আকার হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা, অর্থা আমি প্রতিবারে (৫০,০০০/১১.১) বা ৪৫০০ টি করে শেয়ার ক্রয় করবোএকবারে কেনার চেয়ে কয়েকবারে কিনলে আমার ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমছেএবার আসুন এই শেয়ার থেকে আমরা কতটুকু লস দিতে রাজি আছি তা দেখিএই শেয়ারের সর্বশেষ সাপোর্ট লেভেল ১০.৭ , এখন আমি যদি ১০.৭ কে স্টপ লস পয়েন্ট ধরি তাহলে আমার লস হচ্ছে ৩.৬%এটা হচ্ছে আমার রিস্ক এমাউন্ট, যদি এই শেয়ার তার সাপোর্ট ব্রেক করে তাহলে আমি শুধু রিস্ক এমাউন্ট ই লস করছিএর বেশি নাএভাবে পজিশন সাইজ করে আমরা আমাদের ঝুঁকি কমাতে পারছি  
সংক্ষেপে বিষয়টা আবার দেখিঃ

মোট মূলধনকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে আমরা ঝুঁকি ভাগ করে দিলাম
প্রত্যেক ভাগ একেকটি সেক্টরে ভাগ করে ঝুঁকিকে আরো বিভাজিত করলাম
প্রত্যেক সেক্টরে শেয়ার কেনার সময় কয়েকবারে কিনে ঝুঁকি আরো বিভাজিত করলাম
পূর্ববর্তী সাপোর্ট লেভেলকে স্টপ লস পয়েন্ট ধরে, সাপোর্ট লেভেল ক্রস করলেই এই শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে কেবল রিস্ক এমাউন্টই লস করলাম



পজিশন সাইজিং কি এতই গুরুত্বপূর্ন???

হ্যাঁপ্রত্যাশিত মাত্রার ঝুঁকি নিয়ে পজিশন সাইজ করে আপনি আপনার ভীতির (Fear) মাত্রা কমাচ্ছেন, ভুলের মাত্রা কমাচ্ছেন, বাজারের গতিপ্রকৃতি ভালোভাবে বুঝতে পারছেন এবং আপনার লেনদেন আচরণে (Trade behaviour) গুণগত পরিবর্তন আনতে পারছেনকি ধরণের গুনগত পরিবর্তন? আপনার মধ্যে লুকিয়ে ছিলো পুঁজি হারানোর ভয় এবং লাভ হারানোর শংকা, এখন আপনি প্রত্যাশিত মাত্রার লস মেনে নিয়ে ট্রেড করে নিজেকে শঙ্কামুক্ত রাখতে পারবেনআপনার কেনা দাম থেকে শেয়ারের দাম বাড়তে থাকলে আগের সাপোর্টের উপরে নতুন স্টপ লস পয়েন্ট ধরবেন যথার্থ পজিশন সাইজ আপনাকে কোয়ালিটি ট্রেডার হিসেবে গড়ে তুলবে, আপনার ভীতি কমে আসবে, আপনার আস্থা বাড়বে

আমার পোর্টফোলিও পজিশন সাইজিং কেমন হবে???

উইলিয়াম জে ও'নেইল (William J O'Neil) বলেছেন এ রকমঃ ১০,০০০ ডলারের কম হলে ২/৩ টি, ৫০,০০০ ডলার পর্যন্ত ৪/৫ টি, ৫০,০০০ ডলারের উপরে হলে ৬/৮ টি, আমাদের প্রেক্ষাপটে এমন হতে পারেঃ ১০ লক্ষ টাকার নিচে ৪/৫ টি, ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৬/৮ টি, ৫০ লক্ষ টাকার উপরে সর্বোচ্চ ১০ টিতবে এটি কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নয়, আপনি যত দক্ষ ট্রেডার হবেন আপনার পোর্টফোলিও ও তত ডাইভাইর্সিফাইড হবেকেবলমাত্র হিসাব নিকাশ বা নিয়মিত ট্রেন্ড দেখার বা বুঝার জন্য পোর্টফোলিও সাইজ আপনার সীমার মধ্যে রাখতে পারেনআমি দেখেছি কেউ কেউ কেবল ১ টা শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন পুরো মূলধন ( সব ডিম এক ঝুড়িতে!!!) আবার কেউ কেউ ৪০ টাতে বিনিয়োগ করেছেন (ডিমের চেয়ে ঝুড়ি বেশি!!!), প্রথমটাতে ঝুঁকি বেশি, দ্বিতীয় টাতে অতি ডাইভার্সিফাইড, আন-ম্যানেজএবল

2 comments:

  1. রিটায়াট মানুষ,নতুন বিনিয়োগকরতে যাচ্ছি। এমন উপযোগী লেখাটা পেয়ে খুবই উপকার হল । আমারএই পদ্ধতিটি পছন্দ হয়েছে।এভাবেই শুরু করব। ধন্যবাদ,,। একটি কম্পানির শেয়ার কিনার জন্য প্রধান ২/৩ টি কি কি বিষয় ,কখন সর্বনিম্ন, বুজার উপায় ( গ্রাফ, ইপিএস, বিজনেস গ্র্ুথ) ইত্যাদির কৌশল জানালে উপকৃত হতাম।

    ReplyDelete